ভাত খেতে চাওয়ায় বৃদ্ধ মাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো সন্তান

 

 নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝিনাইদহে ভাত খেতে চাওয়ায় আখিরন নেছা (১০০) বছরের বৃদ্ধ মাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো নিজ সন্তান ও তার স্ত্রী। তাঁর হাত, পা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা রক্তাক্ত জখম।

বিছানায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন আখিরন নেছা।  মানুষ গেলেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন  বৃদ্ধা।  তাঁর চাহনিতে শুধুই অসহায়ত্বের ছাপ। চোখেমুখে আতঙ্ক আর ভয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। 

সন্তানের আদরে কী হয়েছে মা জিজ্ঞাসা করতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বললেন দুপরে ভাত খেতে চাওয়ায় ছেলে মন্টু মন্ডল মারধর করেন তাকে। আখিরন নেছা ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মঙ্গল মন্ডলের স্ত্রী। স্থানীয় ইউপি সদস্য বসির উদ্দীন জানান, বিধবা আখিরন নেছার তিন ছেলে। ছোট ছেলে সেন্টু মন্ডল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক বছর আগে। বড় ছেলে ঠান্ডু মন্ডল অবসরপ্রাস্ত স্কুল শিক্ষক। আর মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মন্ডল পেশায় কৃষক।

ছেলেদের সংসারে পালাক্রমে খাওয়া দাওয়া করেন আখিরন নেছা। বছর খানেক আগে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যায়। আজও জোড়া লাগেনি ভাঙা পায়ের হাড়। হাটুর নিচের হাড় ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঝুলে আছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। চলতে ফিরতেও পারেন না আখিরন নেছা। এই বহুমুখী অসহায়াত্ব নিয়ে জীবন পার করতে থাকা শতবর্ষী মানুষ একটা নির্দিষ্ট থাকে হত্যা করেছে আখিরণকে প্রায় সন্তানদের অবহেলার শিকার হতে হয়। পাড়া প্রতিবেশিদের অভিযোগ, তাকে মাঝে মধ্যেই মারধর করা হয়।

আর এই মারধরের একমাত্র অন্যতম কারণ হচ্ছে তার নামে থাকা ৮ বিঘা জমি। জমি লিখে দিতে চাপ দেন মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মন্ডল। এ নিয়ে প্রায়ই মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। বুধবার দুপুরে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা খাওয়া দাওয়া শেষ করলেও মায়ের খাওয়ার খোঁজ নেননি তারা। অভুক্ত শতবর্ষী মা আখিরন নেছা ক্ষুধার জ্বালায় ছঠফট করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে তিনি ছেলে ও বউয়ের কাছে খাবার খেতে চাইলে ক্ষীপ্ত হয়ে তাঁকে গালাগালি করেন সন্তান মন্টু মন্ডল। মা-সন্তানের বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে মন্টু মন্ডল ও তার স্ত্রী তারা খাতুন লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন। সন্তান ও তার স্ত্রীর এমন অমানবিক নির্যাতনে মুখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে রক্তাক্ত হয়। রক্তাক্ত মাকে উঠানে ফেলে রাখেন তারা। ভাঙা পা ও অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন রকম গড়িয়ে ছেছড়িয়ে রাস্তায় পৌছান।

এ সময় প্রতিবেশী ইউপি সদস্য বসির উদ্দিন তাকে রাস্তায় দেখে উদ্ধার করে পৌছে দেন তার ছোট ছেলের কাছে। 


ইউপি সদস্য আরো জানান, ছেলে মন্টু মন্ডলের মারধরে রক্তাক্ত মাকে চিকিৎসা তো দুরের কথা দেখতেও আসেনি কোন সন্তান। পরে পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা করানো হয় আখিরণ নেছাকে। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া বলেন, খবর পেয়ে আমি ওই মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। সন্তানের হাতে এই শেষ বয়সে মারধর খাওয়া অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। এটি মেনে নেওয়া যায় না।

ভাত খেতে চাওয়ায় শতবর্ষী মাকে এভাবে মারধর করা খুবই বেদনাদায়ক ও আইন ভঙ্গের কাজ। এদিকে মাকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মানোয়ার হোসেন মন্টু দাবি করেন, উঠানে পড়ে গিয়ে তার মা আহত হয়েছেন। 

হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আবু আজিফ বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাা নেওয়া হবে।


Previous Post Next Post